গাজাবাসীর জন্য ত্রাণসামগ্রী বহনকারী নৌকার বহরকে আটক করেছে ইসরায়েল। সুইডিশ জলবায়ু অ্যাকটিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গসহ জাহাজে থাকা কর্মীদেরও আটক করে ইসরায়েল

দীপংকর অধিকারী: গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ)-এর অংশ হিসেবে থাকা বেশ কয়েকটি জাহাজকে “নিরাপদে থামানো হয়েছে” এবং বহরে থাকা জাহাজগুলোকে ইসরায়েলি বন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে, জিএসএফ জানায় যে তাদের ৩০টি নৌকা এখনো “গাজার দিকে শক্তিশালীভাবে যাত্রা করছে” এবং নৌকাগুলো ওই সময় তাদের নির্ধারিত গন্তব্য থেকে ৪৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই নৌবহরকে জানানো হয়েছে যে এটি গাজার পাশের জলসীমায় “একটি বৈধ নৌ অবরোধ লঙ্ঘন করছে”। যদিও নৌকাগুলো অবরোধ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে কি না তা স্পষ্ট নয়।

থুনবার্গকে একটি নৌকার পাটাতনে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে, যেখানে তার পাশে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য তাকে পানি ও একটি জ্যাকেট দিচ্ছেন।

নৌকাগুলো থেকে করা লাইভস্ট্রিমে বোঝা যাচ্ছে যে ৪৪টি নৌকার সবকটিকে সরিয়ে নেওয়া বা খালি করে ফেলা হয়নি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সাহায্য পরিবহনের জন্য জিএসএফের প্রচেষ্টাকে “উসকানিমূলক” হিসেবে অভিহিত করে ইসরায়েলি সরকার বলেছে, “গ্রেটা এবং তার বন্ধুরা নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।”

জিএসএফ জানিয়েছে যে প্রধান জাহাজগুলোর মধ্যে একটি আলমা, সেইসাথে সুরিয়াস এবং আদারাসহ একাধিক জাহাজকে আটক করে আটকে রাখা হয়েছে।

এর আগে, তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে “উদ্দেশ্যমূলকভাবে নৌ যোগাযোগ বন্ধ করা, বিপদ সংকেত পাঠানোয় বাধা দান এবং নৌকাগুলোয় ইসররায়েলি বাহিনী অভৈধভাবে উঠে আসার” অভিযোগ করেছে।

তারা বলেছে যে হস্তক্ষেপের সময় নৌবহরটি গাজার উপকূলরেখা থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। দলটি আশা করেছিল যে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের জাহাজগুলো গাজায় পৌঁছাবে।

এদিকে সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে গ্রিস, ইতালি, জার্মানি, তিউনিসিয়া এবং তুরস্কে মানুষ জড়ো হয়েছে।

“নৌবহর, সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং গাজার পক্ষে” প্রতিবাদে শুক্রবার ইতালির শ্রমিক সংগঠনগুলো সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বাধা দেওয়াকে “সন্ত্রাসবাদের কাজ” বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং “এই হামলার জন্য দায়ী অপরাধীদের” জবাবদিহি করার আহ্বান জানিয়েছে।

কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি গুস্তাভো পেট্রো প্রতিক্রিয়া হিসেবে তার দেশ থেকে অবশিষ্ট সব ইসরায়েলি কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছেন এবং নৌবহরে বাধা দেওয়াকে “নেতানিয়াহুর আন্তর্জাতিক অপরাধ” বলে নিন্দা করেছেন।

পেট্রো ২০২০ সাল থেকে ইসরায়েলের সাথে কলম্বিয়ার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও বাতিল করেছেন এবং নৌবহরে থাকা দুই কলম্বিয়ানকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

আইরিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস নৌবহরে বাধা দেওয়া সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদনগুলোকে “উদ্বেগজনক” বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি আশা করেন যে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবে, আটকদের মধ্যে কমপক্ষে সাতজন আইরিশ নাগরিক রয়েছেন, যার মধ্যে সিন ফেইন সিনেটর ক্রিস অ্যান্ড্রুজও রয়েছেন।

যদিও ইসরায়েলি সরকার ফ্লোটিলাকে “সেলফি ইয়ট” হিসেবে চিহ্নিত করেছে, থুনবার্গ সেই সমালোচনার বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিয়েছেন। রোববার তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “আমি মনে করি না কেউ প্রচারণার স্টান্টের জন্য তাদের জীবনের ঝুঁকি নেবে।”

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ইসরায়েল তাদের সরবরাহে ক্রমাগত বাধা দিচ্ছে।

ইসরায়েল দাবি করেছে যে তারা হামাসের হাতে এসব ত্রাণসামগ্রী চলে যাওয়ার পথ বন্ধ করার চেষ্টা করছে।

ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বিকল্প খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা, গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) , যেটিকে জাতিসংঘ সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তারা এসব আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্যোগকে অনৈতিক বলে বর্ণনা করেছে।

জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি গোষ্ঠী গত মাসে নিশ্চিত করেছে যে গাজায় দুর্ভিক্ষ হয়েছে এবং জাতিসংঘের মানবিক প্রধান বলেছেন যে এটি ইসরায়েলের “পদ্ধতিগতভাবে বাধা” দেওয়ার সরাসরি ফলাফল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *